রানীগঞ্জ ইউনিয়নে উৎপাদিত শস্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শস্য হচ্ছে ধান। ধানের পরেই পাটের স্থান। এরপরে যেসব কৃষিজাত দ্রব্যের নাম করতে হয় সেগুলো হচ্ছে মাসকলাই, মটর, ছোলা ইত্যাদি ডাল জাতীয় শস্য। তৈল বীজের মধ্যে রয়েছে সরিষা ও তিল। কাউন, চিনা, গম, যব জাতীয় খাদ্য শস্য উৎপন্ন হয়। এখানকার উল্লেখযোগ্য ফল হচ্ছে ফুটি (বাঙ্গি), তরমুজ, ক্ষীরা ইত্যাদি। এছাড়াও আম, জাম,কাঁঠাল, পেয়ারা, নারিকেল, সুপারি, তাল, খেজুর, জাম্বুরা (বাতাবি লেবু), লেবু, তেঁতুল, কামরাঙ্গা, জলপাই, বেল, ডালিম, আতা ইত্যাদি ফলও প্রচুর পরিমানে উৎপন্ন হয়। মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, ধনে, আদা ইত্যাদি মসলা জাতীয় শস্য, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, শিম, বরবটি, কাকরল, ঢেড়শ, গোল আলু, বেগুন, টমেটো ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি সবজি প্রচুর পরিমানে উৎপাদিত হয়।
খাদ্যের সংজ্ঞাঃ
জীব জগতের সকল জীবই বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। দৈনন্দিন জীবনে খাদ্য শব্দটি অতি পরিচিত। এস কিছু খাই- বললেই বুঝাতে হবে দেহের খাদ্যের প্রয়োজন যা জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য। তাই বলে আমরা যা খাই তার সব কিছুই কিন্তু খাদ্য নয়। খাদ্যরূপে চিহ্নিত বস্তুর সাথে জীবদেহের কতগুলো তত্ত্বগত সম্পর্ক রয়েছে । যার ওপর ভিত্তি করে খাদ্যের সংগা প্রদান করা হয়ে থাকে। খাদ্য ছাড়া জীবন অচল ও অসার। কাজেই জীবনের সাথে সম্পৃক্ততা রেখে খাদ্যের ধারণা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে খাদ্য বলতে এমন সব বস্তু বা পদার্থকে বোঝায়, যা জীবদেহে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় প্রবেশের পর দেহের কলা কর্তৃক শোষিত হয়ে দেহের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধি সাধন ও শক্তি উৎপাদনের মাধ্যমে জৈবনিক কার্যাদি সম্পন্ন করে, কিন্তু দেহের ক্ষতি করে না। অর্থাৎ শরীরের পুষ্টি সাধনের জন্য যে সব উপাদানের প্রয়োজন তাদেরকেই এক কথায় খাদ্য (Food) বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, যেসব দ্রব্য আহার করলে আমাদের দেহের বৃদ্ধিসাধন, ক্ষয়পূরণ, সংরক্ষণ ও তাপশক্তি উৎপাদন করে দেহকে সুস্থ্য সবল ও সতেজ রেখে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে, সে সব দ্রব্যকে খাদ্য বলা হয়। যেমনঃ ডাল, মাছ , মাংস, দুধ ফলমূল, পানি ইত্যাদি। ঘাস, লতা-পাতা প্রভৃতি প্রাণীর খাদ্য এবং উদ্ভিদ মৃত্তিকাস্থ জৈব অজৈব পদার্থ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
খাদ্যের কাজ (Function of Food)
খাদ্য আমাদের দেহে শুধুমাত্র ক্ষুধা নিবৃত্ত করে এমনটি ভাবা ঠিক নয়। খাদ্য দেহে নানবিধ কার্য সম্পাদন করে থাকে। আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞান এবং গার্হস্থ্য অর্থণীতিবিদগণ মানবদেহে খাদ্যের নিম্নোক্ত কার্যাবলী সম্পাদন করে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। যেমনঃ
১। খাদ্য দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি সাধন করে থাকে।
২। খাদ্য দেহের তাপ ও কর্মশক্তি উৎপাদন করে।
৩। খাদ্য দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৪। খাদ্য দেহের অভ্যন্তরীণ কার্যসমূহ নিয়ন্ত্রণ করে।
৫। খাদ্য দেহকে সুস্থ্য, স্বাভাবিক ও কর্মক্ষম রাখে।
৬। খাদ্য দেহে পরিপোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
পুষ্টি (Nutrition)
জীবের একটি জৈবিক প্রক্রিয়া হল পুষ্টি। যে প্রক্রিয়ার জীবের আহার্য খাদ্যবস্তু দেহে প্রবেশের পর পরিপাকের মাধ্যমে ভেঙ্গে সরল উপাদানে পরিণত হয় এবং দেহের প্রয়োজনীয় অংশ শোষিত হয়ে দেহের ক্ষয়পূরণ , বৃদ্ধিসাধন, শক্তি উৎপাদন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তাকে পুষ্টি (Nutrition) বলা হয়। আর যে তন্ত্রের মাধ্যমে জীবদেহের পুষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন হয় তাকে পৌষ্টিকতন্ত্র বলা হয়। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে আমাদের পৌষ্টিক তন্ত্র মুখগহ্বর, গলবিল, অন্ননালী, পাকস্থলি, ক্ষুদ্রান্ত, বৃহদান্ত, পায়ু, যকৃত এবং এনজাইম গ্রন্থি ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত। প্রয়োজনের তুলনায় আহার্য বস্তু অর্থাৎ খাদ্যের উপাদানগুলির মোট পরিমাণ যদি কম হয়, তবে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে এবং কর্মক্ষমতা হ্রাস পাবে। এই অবস্থাকে পুষ্টির অভাব বা Subnutrition বলে। সুতরাং পুষ্টি বলতে শুধু খাদ্যের উপাদানকে না বোঝে উপাদানগুলোর সঠিক অনুপাতে খাদ্যে বিদ্যমান থাকাকে বোঝায়।
অপুষ্টি (Malnutrition)
এক বা একাধিক পুষ্টি উপাদানের দীর্ঘদিন ধরে অভাব হলে শরীরের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষণাদি প্রকাশ পায়। এই ধরনের অবস্থাকেই অপুষ্টি বলে। যেমনঃ অ্যানিমিয়া, গয়টার ইত্যাদি। কোন পুষ্টি উপাদানের আধিক্যের বা অসমতার (Imbalance) কারণেও অপুষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ অতি পুষ্টি (Over nutrition) এবং কম পুষ্টি (Under nutrition) অপুষ্টির অন্তর্গত। পুষ্টি উপাদানের অভাব হলে ও আধিক্য ঘটলে অথবা পুষ্টি উপাদানের অসমতার কারণে শরীরে যে লক্ষণাদি প্রকাশ পায় তাকেই অপুষ্টি (Malnutrition) বলে। খাদ্যের পরিমাণ ও গুণগতমান উভয়ের অপর্যাপ্ততার কারণেই অপুষ্টি হয়ে থাকে। খাদ্য পুষ্টি উপাদানগুলোর প্রত্যেকটি যখন শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে উপস্থিত থাকবে এবং খাদ্য হতে দেহের প্রয়োজনীয় ক্যালরি সরবরাহ হবে তখনই দেহের পুষ্টিমান স্বাভাবিক থাকবে। এদের যে কোন অসমতার কারণে, আধিক্যের কারণে অথবা অভাবের কারণে অপুষ্টি দেখা দেবে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস